হাড়বাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র
হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটন কেন্দ্র সুন্দরবনের মধ্যে অন্যতম পর্যটন স্থান। মংলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে এটি অবস্থিত। এখানকার মূল আকর্ষণ বনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার কাঠের ট্রেইল। যারা প্রথম ট্রেইলে হাঁটবেন তাদের জন্য এটা আনন্দের নতুন অভিজ্ঞতা। প্রায় বছরে বছরে এখানের কাঠ পাল্টাতে হয়। পানিতে ভিজে যায় বলে স্যাঁতস্যাঁতে থাকে। ট্রেইলের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হয়। বনের মধ্যে দিয়ে বিস্তৃত পুরো ট্রেইলটা ঘুরে আসতে মাত্র ৩০/৪০ মিনিটের মতো সময় লাগে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য এমন মুগ্ধ করবে যে ১ ঘণ্টা হাটাও খুব সামান্য মনে হবে।
মিঠা পানির জন্য একটি পদ্মদ্মপুকুর ও ওয়াচ টাওয়ার আছে। ওয়াচ টাওয়ার থেকে প্রায় পুরো হাড়বাড়িয়া দেখা যায়। কাঠের তৈরি এই টাওয়ারে একসাথে ৬ জনের বেশি উঠা যায় না। পদ্মপুকুরের মাঝে পর্যটকদের বসার জন্য ব্যবস্থা করা আছে।
কি কি দেখবেন
যারা একদিনের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে চান তাদের জন্য হাড়বাড়িয়া আদর্শ জায়গা। হাড়বাড়িয়া ইকো পর্যটন কেন্দ্র-টি বাঘের অভয়ারণ্য। হাড়বাড়িয়ার বাঘের দেখা না পেলেও বাঘের পায়ের ছাপ অনেকে দেখতে পায়। এছাড়াও চিত্রা হরিণ ও অন্যান্য বন্য প্রাণীও দেখা মিলবে এখানে। এখানে প্রায়ই লোনা পানির কুমির দেখা যায়। তবে কুমির দেখার জন্য ভালো সময় ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। এই সময়ে রোদ পোহাতে কুমিরগুলো খালের চরে শুয়ে থাকে। এছাড়াও হাড়বাড়িয়ায় সুন্দরনের মায়া হরিণেরও দেখা মেলে। পর্যটকদের জন্য এটা উন্মুক্ত হওয়ায় খুব কাছে থেকে হরিণের দেখা মেলে। এখানকার হরিণগুলো একেবারেই বন্য নয়। অনবরত মানুষের সঙ্গ পায় বলে বনের ধারে একাধিক হরিণের দেখা মেলে। হাড়বাড়িয়ার বাঘের দেখা না পেলেও বাঘের পায়ের ছাপ অনেকে দেখতে পায়। এছাড়াও চিত্রা হরিণ ও অন্যান্য বন্য প্রাণীও দেখা মিলবে এখানে।
জোয়ার-ভাটা অঞ্চল হওয়ার জন্য এখানে মাটি স্যাঁতস্যাঁতে, কর্দমাক্ত, ভেজা থাকে। এজন্য খুব কাছে থেকে লাল কাঁকড়া দেখা যায়। এছাড়াও সুন্দরী, গেওয়া, গড়ান, পশুর, বাইন, গোলপাতা ইত্যাদি গাছ আছে। নানা প্রজাতির পাখি, পোকা মাকড় আছে।
হাড়বাড়িয়ায় সুন্দরনের বিরল মায়া হরিণেরও দেখা মেলে। এখানকার ছোট ছোট খালগুলোতে আছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙাসহ নানান জাতের পাখি। হাড়বাড়িয়ার খালে পৃথিবীর বিপন্ন মাস্ক ফিনফুট বা কালোমুখ প্যারা পাখিও দেখা যায়। হাড়বাড়িয়া খালের পাড়ে ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্রের সোনালি নামফলক। একটু সামনে এগুলেই বন কার্যালয়। এরপরে ছোট খালের উপরে ঝুলন্ত সেতু। সামনের দিকে জঙ্গলের গভীরতা ক্রমশ বেড়েছে। ঝুলন্ত সেতু পেরিয়ে সামান্য সামনে বিশাল এক পুকুর। পুকুরের মাঝে গোলপাতার ছাউনি সমেত একটি বিশ্রামাগার।
টিকেট মূল্য
হারবাড়িয়া ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্রে পর্যটকের জন্য প্রবেশ মূল্য: দেশি পর্যটক জনপ্রতি ৭০ টাকা, বিদেশি পর্যটক ১ হাজার টাকা। সঙ্গে ১৫% ভ্যাট প্রযোজ্য।
কীভাবে যাবেন
কোথায় থাকবেন
এ ভ্রমণে থাকতে হবে মংলায় এসে। মংলায় থাকার জন্য ভালো ব্যবস্থা ইকো রিসোর্ট গুলো এছাড়া আছে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের মোটেল পশুর। এখানকার নন এসি ডবল রুম ১ হাজার ২শ’ টাকা এবং এসি ডবল রুম ২ হাজার টাকা। ইকনোমি বেড ৬শ’ টাকা। মংলা শহরে সাধারণ মানের কিছু হোটেল আছে। এসব হোটেলে ১শ’ থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকায় রুম পাওয়া যাবে।
ভ্রমণ সতর্কতা
♦ বন রক্ষী ব্যতিত জঙ্গলের ভেতরে প্রবেশ করবেন না।
♦ কুমির ও হরিণ প্রজনন কেন্দ্রে কোন প্রাণীকে খাবার খাওয়াবেন না।
♦ পশুর নদী প্রায় সর্বদাই কম বেশি উত্তাল থাকে তাই ভালো ইঞ্জিন চালিত নৌকা নিয়ে ভ্রমণ করুন।
♦ আপনার নৌযানে পর্যাপ্ত পরিমান লাইফ জ্যাকেট ও বয়া রয়েছে কিনা নিশ্চিত হয়ে নিন।
♦ কাঠের তৈরি ট্রেইল এর ছাড়া জঙ্গলে যাওয়া নিষেধ।
♦ জঙ্গলে ধুমপান একেবারে নিষেধ।
♦ অন্যকোনো ময়লা, চিপস, বিস্কুট, চকলেট, প্ল্যাস্টিকের বোতল ইত্যাদির প্যাকেট ফেল যাবে না। এসব ফেলার জন্য নির্দিষ্ট ঝুড়ি আছে।