সুন্দরবন ভ্রমন (Sundarban Tour)
বাংলাদেশ, একটি ভূখণ্ড। যার বেশির ভাগ জায়গা জুড়ে নদ-নদী। তবে দক্ষিণাঞ্চলে বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি রয়েছে যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। একে “ম্যানগ্রোভ বন” বলা হয়। এর কিন্তু চমৎকার একটা নাম আছে। এ বনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী ৷ এই বনে থাকা “সুন্দরী” গাছের নামেই বনের নামটি সুন্দরবন।
সুন্দরবন বেড়ানোর উপযুক্ত সময়
সেপ্টেম্বর থেকে মে মাস সুন্দরবন ঘুরে দেখার জন্যে উপযুক্ত সময়। এই সময় নদী ও সমুদ্র শান্ত থাকে, তাই সুন্দরবনের সকল দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখা যায়। খুলনা ও মোংলা থেকে সবচেয়ে কাছে করমজল ও হারবাড়িয়া বছরের যে কোন সময় একদিনেই ঘুরে দেখা যায়। তবে মূল সুন্দরবনের স্বাদ পেতে হলে গহীনের স্থান গুলোতেই যেতে হবে।
ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে সরাসরি খুলনা যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এসি এবং ননএসি দুই ধরনের বাস চলাচল করে। ঢাকা থেকে সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ এবং ঈগল পরিবহন নিয়মিত চলাচল করে খুলনার উদ্দেশ্য। ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত গাড়িগুলো খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট। ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন কোম্পানির লঞ্চ নিয়মিত যাতায়াত করছে খুলনার উদ্দেশ্যে। খুলনার নন এসি বাসের ভাড়া ৫৫০, এসি ১৪০০ টাকা (আনুমানিক)। বাস থেকে নেমে রিকশা বা অটোতে যেতে হবে লঞ্চ ঘাট। আর ট্রেনে খুলনা গেলে স্টেশনে নেমে গাড়ি নিতে হবে না। কারণ, স্টেশন ও লঞ্চঘাট একেবারেই গায়ে লাগানো।
সায়েদাবাদ থেকে মংলার সরাসরি বাস আছে। এই সেমি চেয়ারকোচ বাসগুলো রাত ৮টা থেকে ৮.৩০ এর মধ্যে ছেড়ে গিয়ে ভোর ৫-৬টার মধ্যে মংলা পৌঁছায়। ভাড়া ৪৫০ টাকা (আনুমানিক)।
সুন্দরবন ভ্রমণের উপায়
আপনি চাইলেই একা বা ২-৩ জন গ্রুপ করে সুন্দরবনের গহীনে ঘুরতে যেতে পারবেন না। সুন্দরবনের ভিতরে ভ্রমণ করতে হলে অবশ্যই ফরেস্ট অফিস থেকে নির্ধারিত ফি দিয়ে অনুমতি ও সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে ঘুরতে যেতে হবে। আর সব গুলো স্থান ঘুরে দেখতে লঞ্চ ও শীপ (Sundarban Ship) ছাড়া বিকল্প কিছু নেই।
নিরাপত্তা, অনুমতি, খরচ আর জটিল প্রক্রিয়ার কারণে সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে সহজ ও সাশ্রয়ী উপায় হচ্ছে কোন ট্যুর অপারেটরের সাথে যাওয়া। প্যাকেজের মধ্যেই শীপে উঠার পর থেকে ট্যুর শেষ করে ঘাটে ফেরা পর্যন্ত থাকার ব্যবস্থা, ৩ বেলার খাবার, ২ বেলা হালকা নাস্তা, বন বিভাগের অনুমতি, নিরাপত্তা রক্ষী ও গাইড সহ সকল যাবতীয় খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
কোথায় থাকবেন
সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণ পয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভাড়া নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকা, ৪ কক্ষ ১২ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ ৩ হাজার টাকা, ৪ কক্ষ ১০ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ ২ হাজার টাকা, ২ কক্ষ ৪ হাজার টাকা। বিদেশিদের কাছে ভাড়া কিন্তু প্রায় দ্বিগুণ। সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে একক, পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে। মংলায় আছে কিছু ইকো রিসোর্ট ও পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল, পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের থাকার জন্য। খুলনা মহানগরে হোটেল রয়েল, ক্যাসেল সালাম, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল ওয়েস্ট ইন্, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলিনিয়াম মানসম্পন্ন।
প্রয়োজনীয় আরও কিছু তথ্য
● সুন্দরবন ভ্রমণের ন্যূন্যতম তিন দিন আগে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হয়। যে তারিখে যেতে চান তার অন্তত পাঁচ দিন আগে ট্যুর অপারেটরের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
● শীতে সুন্দরবনে গেলে অবশ্যই শীতের ভারী পোশাক নিতে হবে।
● লোকালয় থেকে অনেক দূরে থাকতে হবে। সুতরাং, জরুরি প্রয়োজনীয় সব জিনিস ও ওষুধ গুছিয়ে নিতে হবে।
● দল ছাড়া সুন্দরবনে প্রবেশ করা নিরাপদ না। দলে বন বিভাগের একজন নিরাপত্তারক্ষী অবশ্যই থাকতে হবে।
● ট্যুর গাইডের কথা মেনে চলতে হবে।
● সুন্দরবনে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই।
● জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ক্ষতি করা যাবে না। বনের ভেতরে যথাসম্ভব নীরব থাকতে হবে।
● প্লাস্টিক ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে। বনের ভেতরে কোনো প্লাস্টিক বর্জ্য ফেলা অনুচিত।
সুন্দরবন ট্যুর প্যাকেজ সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন :
https://sundarban-tours.com/sundarban-tour-package-dhaka-mongla-khulna.php