Best Time to Visit The Tanguar Haor – টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখন ?
বর্ষাকাল এই হাওর ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। মেঘালয়ের ঢলে নেমে আসা পানিতে তখন হাওর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে। এই জলরাশির ওপর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে হিজল ও করচগাছের বন। তখন হাওরের গ্রামগুলোকে মনে হয় যেন পানির ওপর ভেসে থাকা ক্ষুদ্র কিছু দ্বীপ। দূরে মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়, ঝর্ণা থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানি, মৃদুমন্দ ঢেউ, অগণিত পাখির কলতান পর্যটকদের মন ভুলিয়ে দেয়।
টাঙ্গুয়া হাওর যেতে প্রথমে যেতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়। ফকিরাপুল, সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, এনা পরিবহন, মামুন পরিবহনের বাসগুলো সুনামগঞ্জ যায়। নন এসি বাসের ভাড়া পড়বে (আনুমানিক) ৬৫০-৭৫০ টাকা। বাসে সুনামগঞ্জ পৌঁছাতে ৬ ঘণ্টার মতো সময় লাগবে।
সুনামগঞ্জ থেকে টাঙ্গুয়া
সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা নদীর ওপর নির্মিত বড় ব্রিজের কাছে লেগুনা/সিএনজি/বাইক করে তাহিরপুরে যাওয়া যায়। সময় লাগবে প্রায় দেড় ঘণ্টা। তাহিরপুরে নৌকা ঘাট থেকে আকার ও সামর্থ্য অনুযায়ী ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করতে হবে।
বর্তমানে হাওর ভ্রমণের জন্য রয়েছে বেশ কিছু আধুনিক হাউজ বোট। হাউজ বোট ভাড়া করতে হলে আগে থেকেই বুকিং করতে হয়। হাউজ বোটে ভ্রমণ করতে চাইলে আপনার কাজ হবে শুধু সুনামগঞ্জ বা তাহিরপুর পৌঁছানো। এরপর ভ্রমণের সব দায়িত্ব হাউজ বোটের।
হাউজ বোট সুনামগঞ্জ শহরের সাহেব বাড়ি ঘাট থেকে ছাড়বে নাকি তাহিরপুর থেকে ছাড়বে তা আগে থেকেই জেনে নিতে হবে। সাহেব বাড়ি ঘাট থেকেই হাউজবোট ছাড়লে তখন কষ্ট করে তাহিরপুর যাবার প্রয়োজন পড়ে না।
নৌকা ভাড়া
নৌকার ভাড়া কয়েকটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে। যেমন নৌকার আকার, ধারণক্ষমতা, সুযোগ-সুবিধা, মৌসুম ইত্যাদি। এছাড়াও ছুটির দিনে ভাড়া সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে।
এক রাত থাকার জন্য ছোট নৌকাগুলোর ভাড়া পড়ে ৪ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা, মাঝারি আকারের নৌকাগুলোর ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার এবং বড় নৌকাগুলোর ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকার মতো।
বর্তমানে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে আসার জন্য প্রায় অর্ধশতাধিক আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন হাউজবোট রয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে আধুনিক সব সুবিধা সম্পন্ন আছে ৩ টি প্রিমিয়াম হাইজ বোটঃ ❑ হাওরের সুলতান; ❑ মনপুরা; ❑ গল্প তরী। এই হাউজবোটগুলোতে খাওয়া-দাওয়া, রাতে থাকাসহ ২ দিন ১ রাত ভ্রমণের সমস্ত ব্যবস্থা থাকে। এছাড়াও আছে কিছু ভালো মানের Traditional বোট। যেমনঃ অবসর সময়ে সবাইকে নিয়ে আড্ডা ও বিনোদনের জন্য দুটি লবি, রুম এবং লবির সবখানে লাইট, ফ্যান এবং চার্জিং সুবিধা, জেনারেটর সুবিধা ইত্যাদি। খরচ হবে জনপ্রতি ৬-১০ হাজার টাকা। তবে দল যদি অনেক বড় হয়, যেমন ১৬-২০ জনের মতো হলে তখন জনপ্রতি ভাড়া অনেকটাই কমে আসবে। তখন জনপ্রতি হাজার ৬-৭ হাজার টাকার মতো খরচ হবে।
দর্শনীয় স্থান
হাওর ভ্রমণকালে পানিতে না নামলে ভ্রমণ অনেকটাই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ওয়াচটাওয়ার এলাকায় এসে পানিতে নেমে আশপাশের জলাবনে ঘুরে বেড়ানো যায়। ওয়াচটাওয়ারের ওপরতলায় উঠে হাওর অঞ্চলের সৌন্দর্য বেশ ভালোভাবে দেখতে পাওয়া যায়।এরপর নৌকায় করে টেকেরঘাট এলাকায় চলে যেতে হবে। এখানে দেখতে যেতে পারেন অপার্থিব সৌন্দর্যের নীলাদ্রি লেক। একদিকে টিলা-পাহাড়ের সমারোহ আর অন্যদিকে স্বচ্ছ নীল জলের হ্রদ- সব মিলিয়ে এটি যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের আধার। নীলাদ্রি লেক থেকে সিএনজিতে করে চলে যেতে পারেন লাকমাছড়া। ভারত সীমান্তঘেঁষা এই এলাকায় দেখা যাবে মেঘে আচ্ছাদিত সবুজ সব পাহাড় আর পাহাড় থেকে নেমে আসা স্বচ্ছ পানির ঝর্ণাধারা।
এ ছাড়া পরদিন বারিক টিলা ও যাদুকাটা নদী দেখতে যেতে পারেন। পাশাপাশি ঘুরে আসতে পারেন শিমুল বাগানে। তবে যেখানেই যেতে চান না কেন নৌকার মাঝিকে ভ্রমণের শুরুতেই সবকিছু জানিয়ে রাখতে হবে।
টাঙ্গুয়া হাওর ভ্রমণের সতর্কতা ও কিছু পরামর্শ
❑ হাওর ভ্রমণকালে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিন।
❑ হাওরে রওনা হবার আগে তাহিরপুরে থানায় আপনার নিরাপত্তার জন্যে জিডি করে নিন।
❑ যে কোন কিছুর জন্যে দামাদামি করে নিবেন।
❑ একসাথে গ্রুপ করে গেলে খরচ কম হবে। ৬-৭ জন বা ৮-১০ জনের গ্রুপ হলে ভালো।
❑ হাওরে বজ্রপাত হলে নৌকার ছৈয়ের নিচে অবস্থান করুন।
❑ খাবারের অতিরিক্ত অংশ/উচ্ছিষ্ট, প্যাকেট ইত্যাদি হাওরের পানিতে ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
❑ উচ্চ শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক বা যন্ত্র পরিহার করুন।
❑ রাতের বেলা অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো উৎপন্ন করবেন না।
❑ টাঙ্গুয়ার মাছ, বন্যপ্রাণী কিংবা পাখি ধরা বা এদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ে এমন কাজ থেকে বিরিত থাকুন।
❑ টাঙ্গুয়ার জলাবনের কোন রূপ ক্ষতিসাধন না করার ব্যপারে সতর্ক থাকুন।