সুন্দরবনের মধু – Sundarbans Honey
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক চাকের মধু হলো বাংলাদেশের সর্বোৎকৃষ্ট মধু। কারণ বাংলাদেশের একমাত্র সুন্দরবনেই শতভাগ অর্গানিক মধু পাওয়া যায়। সুন্দরবন মানব সৃষ্ট বন নয় এবং সুন্দরবনের কোন গাছে কোন কীটনাশক বা রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না। এই ম্যানগ্রোভ বনে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবেই গাছপালা গুলো বেড়ে ওঠে। এবং বুনো মৌমাছির দল এসকল গাছের ফুল থেকে পুস্পরস সংগ্রহ করে তাদের মৌচাকে মধু হিসেবে জমা করে। এজন্য সুন্দরবনের চাকের মধু শতভাগ অর্গানিক এবং গুনে-মানে সবচেয়ে সেরা।
প্রাকৃতিক RAW মধুর বৈশিষ্ট্যঃ
✓ খেতে খুবই সুস্বাদু, হালকা টকটক মিষ্টি লাগে।
✓ কিছু মানুষের কাছে- সুন্দরবনের মধু অনেকটা আখের রসের মতো লাগে।
✓ মধুর ঘনত্ব সবসময় পাতলা হবে (এযাবৎ আমরা কখনই সুন্দরবনে ঘন মধু পাইনি)।
✓ সুন্দরবনের মধুর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- একটু ঝাঁকি লাগলেই প্রচুর পরিমাণে ফেনা হয়ে যাবে।
✓ সুন্দরবনের খাটি মধু আমরা কখনই জমতে দেখনি। হোক সেটা ফ্রিজের ভেতরে বা বাইরে।
✓ এই মধুর আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- হাতে চাক কাটা পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা মধুর উপরে হলুদ রঙের পোলেন জমা হয়। এটাকে অনেকে গাদ জমা বলে থাকেন।
RAW মধুতে ফেনা হয় কেন?
সুন্দরবনের প্রাকৃতিক চাকের RAW মধুতে প্রায় সময়ই ঝাঁকি লাগলে ফেনা হতে দেখা যায়। ঝাঁকি লাগলে বা পাত্র পরিবর্তন করলে পাত্রের অর্ধেক কিংবা সম্পূর্ণ মধুই সাদা রঙের ফ্যানাতে রুপান্তর হয়। এটা দেখে সাধারণ মধু ক্রেতারা অনেকসময় মধু খাঁটি কিনা এব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেন। কিন্তু এটি খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। বরং সুন্দরবনের মধু চেনার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আসুন আমরা এই ব্যাপারে Scientific ব্যাখ্যা জেনে নেই!
আমরা সবাই জানি সুন্দরবন একটি ম্যানগ্রোভ বন। এই বনের আবহাওয়া আমাদের দেশের অন্য অঞ্চলদের আবহাওয়া থেকে সবসময়ই আলাদা থাকে। এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বাতাসে আদ্রতার পরিমাণ সবসময়ই বেশি থাকে। সঙ্গত কারণে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মৌচাকের RAW মধুতেও জলীয়দ্রবণের পরিমাণ সবসময় বেশি থাকে। অর্থাৎ মধুর ঘনত্ব অনেক কম হয় বা মধু খুব পাতলা হয়।
যার ফলে মধুতে একটু ঝাঁকি লাগলে বা মধুর পাত্র পরিবর্তন করলে মধুর মধ্যে এক ধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে এবং এতে কার্বন-ডাইঅক্সাইড উৎপন্ন হয়। এই কার্বন-ডাইঅক্সাইডই মধুর মধ্যে বায়ু বুদবুদ সৃষ্টি করে, যা আমরা সাদা ফ্যানা হিসেবে দেখতে পাই। একই কারণে পাত্র যদি বন্ধ থাকে তবে পাত্রের ভেতরে গ্যাস তৈরি হয়। মধুটি প্ল্যাস্টিক বোতলে রাখলে বোতলটি অনেকসময় ফুলে যেতে দেখা যায়। আবার মধুটি কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করলে গ্যাসের চাপে পাত্রটি অনেকসময় ফেটে যায়।
তাই, সুন্দরবনের মধু যে পাত্রে রাখবেন, কিছুদিন পর পর এর মুখ খুলে ভেতরের গ্যাসটি বের করে দিন। তাহলে পাত্র ফেটে কোন দুর্ঘটনা ঘটার আশংকা থাকবে না। মধুতে ফেনা তৈরি হলে মধুটি কিছুক্ষণ স্থিরভাবে রেখে দিন। ফ্যানা যুক্ত মধুটি আপনা আপনি পুনরায় তরল মধুতে পরিণত হবে। এবং এতে মধুর গুণগত মানের কোন পরিবর্তন ঘটবে না।
Raw Honey এবং Processing Honey কাকে বলে?
মৌমাছি যে মধু তৈরি করে মৌচাকে জমা করে, সেই মধুই হচ্ছে কাঁচা মধু বা ‘র হানি’। সেটা গ্রাম গঞ্জের হাতে চাক কাটা মধু হোক বা বাক্সের ভেতরে পোষা মৌমাছি দিয়ে উৎপাদিত মধু হোক। এই দুই প্রকার মৌমাছিই যদি ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে, তাহলে এই দুই প্রকার মধুই ভালো মধু, খাঁটি মধু। বাজারে বিক্রি হওয়া বেশিরভাগ মধু প্রক্রিয়াজাত মধু বা Processing Honey। কাঁচা মধু এবং প্রক্রিয়াজাত মধু , এই দুই মধুর মধ্যে স্পষ্ট অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রক্রিয়াজাত করা হয় মধু গরম করার মাধ্যমে। আর মধু গরম করলে মধুর অনেক উপকারিতা নষ্ট হয়ে যায় এবং অনেক সময় ক্ষতিকর হয়ে যেতে পারে। তাই আমাদের অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে ভালো মানের Raw Honey বা কাঁচা মধু খাওয়ার জন্য।
সুন্দরবনের মধু কখন এবং কিভাবে সংগ্রহ করা হয়?
ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের মধু উৎপাদনের সময় সাধারণত মার্চ মাসের শেষের দিক থেকে জুন মাস পর্যন্ত। এই সময়ে সুন্দরবনে অনেক প্রকার ফুল ফুটতে দেখা যায়। প্রকৃতিতে অনেক প্রকার ফুল থাকলেও মৌমাছি প্রধান চারটি ফুল থেকে উল্লেখযোগ্য মধু সংগ্রহ করে। আর তা হলো- খলিশা, গড়ান, কেওড়া ও বাইন। মৌমাছি এই সময়ে সুন্দরবন থেকে যে মধু সংগ্রহ করে, আমরা তাকেই সুন্দরবনের মধু বলে থাকি।